Rajshahi IT BD
Information based blog for new generation
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

আখের রসের উপকারিতা ও অপকারিতা

0 2

আখের রসের উপকারিতা ও অপকারিতা

গরমে আমাদের শরীর যখন ডিহাইড্রেশন এ ভোগে, তখন সবাই পানির পাশাপাশি অন্য পানীয় পান করতে ইচ্ছা পোষন করে । এ অবস্থায় সবাই আখের রসকে পানীয় হিসেবে বেছে নেয় । আর অনেকেই জানতে চান আখের রসের উপকারিতা ও অপকারিতা, আখের রসের অপকারিতা শরীরের উপর কি প্রভাব ফেলে, এর পুষ্টিগুণ ইত্যাদি সম্পর্কে । 

আখের রসের উপকারিতা ও অপকারিতা
তাহলে চলুন আজ জেনে নেওয়া যাক আখের রসের গুনাগুন সম্পর্কে । এর উপকারিতা, অপকারিতা, কখন খাওয়া উচিত ইত্যাদি সম্পর্কে চলুন জেনে নেই ।

আখের রসের পুষ্টিগুণ

আখের রসের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানার আগে এর পুষ্টিগুণ আগুন সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত । আখের রসে প্রোটিন, কোলেস্টেরল ও ফ্যাট প্রায় নেই বললেই চলে । কিন্তু এতে আয়রন, শর্করা, পটাশিয়াম প্রচুর পরিমানে রয়েছে । যা পান করার পর মানবদেহ সতেজ হয়ে ওঠে এবং ডিহাইড্রেশন থেকে মুক্তি পাওয়া যায় । এছাড়া বিভিন্ন রোগ থেকেও মুক্তি পাওয়া যায় ।
ডায়াবেটিস রোগীর জন্য একদিকে ভালো কাজ করে । যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তারা প্রতিদিন আখের রস পান করলে রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক থাকে । এছাড়া আরও অনেক গুনাবলী আখের রসে লক্ষ করা যায় । যা আমরা পরবরতীতে জানতে পারবো ।

আখের রস কখন খাওয়া উচিত ?

গরমে অতিরিক্ত রোদে আমরা যে পানি পান করি তা আমাদের শরীর থেকে ঘাম ও মূত্র আকারে বের হয়ে যায় । তখন আমাদের শরীরে পানিশুন্যতা বা ডিহাইড্রেশন দেখা দেয় । এই সময় আখের রস আমাদের শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে । তবে আখের রস খাওয়ার কিছু সময় আছে ।
চিকিৎসকের মত অনুযায়ী, বিকালবেলা এই সময়টা আখের রস পান করার জন্য উপযুক্ত সময় । তবে রাতে আখের রস না খাওয়াই ভালো। আখের রসের উপকারিতা ও অপকারিতা বিষয়গুলো আমাদের আখের রস পান বা ব্যবহারের উপর নির্ভর করে । বিশেষজ্ঞদের মতে, গরমকালে সকালে খালি পেটে আখের রস পান করা শরীরের জন্য উপকারী । তারা মনে করেন, আখের রসে যে গ্লুকোজ থাকে তা সারাদিনের কাজকর্মের শক্তি জোগায় ।

আখের রস খেলে কি ডায়াবেটিস বাড়ে ?

আমরা জানি, ডায়াবেটিস রোগ হলে রক্তে শর্করার মাত্রা বা ভারসাম্য ঠিক থাকে না । ডায়াবেটিস রোগ এর সবথেকে বড় লক্ষন হিসেবে ধরা হয় অতিরিক্ত তৃষ্ণা লাগা । এসময় অনেকে মনে করেন আখের রস ডায়াবেটিস সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে । অন্যদিকে প্রতি গ্লাস আখের রস এ প্রোটিন থাকে ০.২৭ গ্রাম, ১১২ ক্যালরি ও ২৭ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে ।
আখের রসে প্রচুর পরিমানে চিনি থাকলেও একফোটাও চর্বি নেই । তাই আখের রস পান করা নিরাপদ প্রায় ।ডায়াবেটিস রোগীর জন্য সুক্রোজ অত্যন্ত ক্ষতিকর । অন্যদিকে ১৫% সুক্রোজ থাকে এক গ্লাস আখের রসে । এটি রোগীর রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয় । তাই ডায়াবেটিস রোগীদের আখের রস স্বল্প পরিমানে খাওয়া উচিত ।
আবার বিষেশজ্ঞরা মনে করেন, আখের রস এ জি-আই এর পরিমান খুব কম থাকে । যার কারণে যেসব ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার পরিমাণ খুবই কম তাদের জন্য আখের রস অত্যন্ত কার্যকরী । তারা আরও মনে করেন, আখের রসে এক ধরনের যৌগ আছে যার নাম পলিফেনল ।
পলিফেনল রোগীর দেহের অগ্নাশয়ে পৌঁছে ইন্সুলিন তৈরি করে । যা একজন ডায়াবেটিস রোগীর জন্য অত্যন্ত ভালো । এছাড়া পুরুষের বীর্যে শুক্রানুর সংখ্যা বাড়াতে আখের রস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে । গর্ভকালীন সময়ে নারীদের আখের রস প্রতিদিন পান করা সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে সহায়ক । যদি আমাদের আখের রসের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকে তাহলে ডায়াবেটিস রোগীর কতটুকু বাকি পরিমাণ আখের রস করা উচিত তা জানা যায় ।

আখের রসের উপকারিতা

  • গরমকালে ঘামের ফলে আমাদের শরীর থেকে প্রচুর পরিমানে পানি বের হয়ে যায় । এসময় শরীর ডিহাইড্রেটেড অবস্থায় থাকে । তখন আখের রস পান করলে কার্বোহাইড্রেট শরীরের শক্তি ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে ।
  • এছাড়া পুরুষের বীর্যে শুক্রানুর সংখ্যা বাড়াতে আখের রস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে । গর্ভকালীন সময়ে নারীদের আখের রস প্রতিদিন পান করা সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে সহায়ক । স্তনের দুধ ক্ষরনেও ভূমিকা রাখে ।
  • অনেকেই মনে করেন আখের রস ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর । কিন্তু গবেষকরা জানান যে, আইসোম্যাল্টোজ নামে আখের রসে এক ধরনের উপাদান থাকে যা ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রনে রাখে ।
  • জন্ডিস রোগীদের জন্য আখের রস খুব উপকারী । লিভার ভালো রাখতেও এটি সাহায্য করে । আবার প্রসাবের সমস্যা হলে আখের রস অনেক উপকারে আসে ।
  • আমাদের ত্বক ও চুল ভালো রাখতে আখের রস গুরুত্বপূর্ণ । আখের রসের আলফা- হাইড্রক্সি এসিড ত্বক ভালো রাখে।এটি ব্রনের সমস্যা দূর করতেও সাহায্য করে ।
  • আখের রসে প্রচুর পরিমানে এন্টি-অক্সিডেন্ট থাকে । যা মানবদেহের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ কর‍তে সাহায্য করে ।
  • প্রচুর ফাইবার থাকার কারনে আখের রস কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে পারে । এছাড়া কোলেস্টেরলের সমস্যাকেও নিয়ন্ত্রনে রাখতে ফাইবার অনেক সাহায্য করে ।
  • আখের রসে এক ধরনের বিশেষ উপাদান থাকে, যার নাম ফ্লবোনয়েড । এটি ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে ।
  • আখের রসে প্রচুর মাত্রায় ক্যালসিয়াম থাকে । যা হাড়ের গঠন মজবুত করে এবং ক্যাভিটি দূর করে দাঁতকে ভালো রাখতে সাহায্য করে ।
  • আখের রস দেহে প্রোটিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে । যার ফলে কিডনি বিভিন্ন রোগ হতে বেচে থাকে ।
আখের রসের উপকারিতা ও অপকারিতা এই দুটো বিষয়ের মধ্যে অপকারিতার থেকে উপকারিতার সংখ্যাই বেশি । তাই চাইলে আমরা গরমকালে পানির পাশাপাশি আখের রস পান করতে পারি । যা আমাদের দেহ বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্ত ও সুস্থ রাখে ।

আখের রসের অপকারিতা

  • আখের রসে পলিকোসানোল নামক উপাদান থাকে । এই উপাদান মানবদেহের রক্ত পাতলা করতে সাহায্য করে । যার কারনে মানবদেহে কোথাও কেটে গেলে রক্ত জমাট বাধতে অনেক সময় লাগে ।
  • রাস্তার ধারে খোলা অবস্থায় পাওয়া আখের রস না খাওয়াই উচিত । কারন এটি শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর ।
  • অতিরিক্ত আখের রস খেলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে । যার কারনে নিদ্রাহীনতা, মাথা ঘোরা ও বমি ভাব হতে পারে ।
  • ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আখের রস যেমন একদিকে ভালো । তেমনি এর ক্ষতিকারক দিকও রয়েছে । অতিরিক্ত আখের রস ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয় ।
  • আখের রসে থাকা অতিরিক্ত ক্যালরি থাকে । যার ফলে মানুষের শরীরের ওজন বেড়ে যায় । এটি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর ।
  • শীতকালে আখের রস খেলে ঠান্ডা লাগতে পারে । ফলে সেসময় এটি না খাওয়াই উত্তম ।
  • যদি অনেক সময় ধরে আখের রস সংরক্ষন করার জন্য রেখে দেওয়া হয়, তবে ব্যক্টেরিয়া ও ছত্রাক জন্মায় । যা খেলে আমাদের শরীরের ক্ষতিসাধন হয় ।
আরও পড়ুন  কি খেলে বুকের দুধ আসে বিস্তারিত জানুন

গর্ভাবস্থায় আখের রসের উপকারিতা

  • আখের রস গর্ভকালীন মায়ের জন্য অত্যন্ত উপকারী । এটি হবু মায়ের পেটে গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য ও মর্নিং সিকনেস এর মত সমস্যা দূর করতে সহায়ক ।
  • গর্ভকালীন সময়ে নারীদের আখের রস প্রতিদিন পান করা সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে সহায়ক ।
  • আখের রস গর্ভকালীন মায়ের স্তনের দুধ ক্ষরনেও ভূমিকা রাখে ।

আখ খেলে কি ওজন কমে ?

আখের রসের তৈরি ভিনেগার মানবদেহের ওজন কমাতে সাহায্য করে । এই ভিনেগার প্রতিদিন সকাল ০৮ টার আগে খাওয়া উচিত । এই সময়ে আখের রসের তৈরি ভিনেগার খেলে ফ্যাট বার্ন হয় এবং ওজন বৃদ্ধি করে । আখের রসে থাকা এন্টি-অক্সিডেন্ট শরীরের ভিতরের চর্বি পরিস্কার করতে সাহায্য করে । শরীরের অতিরিক্ত ক্যালরি বার্ন করে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি গলাতে সাহায্য করে ।
আখের রস মেটাবলিক রেট বাড়াতে সাহায্য করে । কারন মেটাবলিক রেট বাড়লে হজম খুব দ্রুত হয় । আখের রস শরীরে জমে থাকা ময়লা পরিস্কার করতে সাহায্য করে । আখে ১৩ গ্রাম ফাইবার থাকে । আর ফাইবার আমাদের দেহের শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাহায্য করে । আখের রসের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকলে আমরা বিভিন্নভাবে উপকৃত হব ।

লেখকের মন্তব্য

আজকের পোস্ট এ আমরা আখের রসের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি । গরমকালে আমরা প্রায় সময় আখের রস খেয়ে থাকি । আজকের আলোচনায় আখের রস সম্পর্কে যে বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে তা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।
আশা করি আমাদের এই আর্টিকেল থেকে আপনি আখের রস সম্পর্কে যথাযথ তথ্য পেয়েছেন । আমাদের এই আর্টিকেল যদি আপনার একটু হলেও কাজে আসে তবে আমাদের পরিশ্রম স্বার্থক । আমরা এর পাশাপাশি আপনাদের কাজে আসবে এইরকম আরো নানা রকমের পোস্ট আমাদের ওয়েবসাইট এ প্রকাশ করে থাকি । নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট এর সাথেই থাকুন । ধন্যবাদ ।
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Leave A Reply

Your email address will not be published.