আমাশয়ে বেলের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
প্রিয় পাঠকবৃন্দ, আজকে আমাদের পোষ্টের বিষয় হল বেল সম্পর্কে। অনেকেই জানতে চান আমাশয়ে বেলের উপকারিতা, বেল খাওয়ার সঠিক সময়, খালি পেটে বেল খাওয়ার উপকারিতা, পাকা বেল খাওয়ার নিয়ম, বেলের উপকারিতা এবং অপকারিতা ইত্যাদি বিষয়ে। আজকে আমরা এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব।
আমাশয়ে বেলের উপকারিতা
- আমিষ – ১.৪০ থেকে ২.৬০ গ্রাম
- শর্করা – ২৮,১০ থেকে ৩১.৮৫ গ্রাম
- ক্যারোটিন – ৫০-৫৫ মিলিগ্রাম
- নিয়াসিন – ১ মিলিগ্রাম
- টারটারিক অ্যাসিড – ২.১০ মিলিগ্রাম
- থায়ামিন – ০.১৫ মিলিগ্রাম
- রিবোফ্ল্যাভিন – ১.২০ মিলিগ্রাম
- এসকরবিক অ্যাসিড – ১০-৫০ মিলিগ্রাম
বেল খাওয়ার সঠিক সময়
- সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে আমরা পেলে শরবত পান করতে পারি। কারণ এই সময় পান করা এক গ্লাস বেলের শরবত আমাদের সারা দিনের কাজের এনার্জি যোগায়। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সারাদিন শরীর ঠান্ডা রাখতে সকাল বেলা একগ্লাস বেলের শরবত পান করা যেতেই পারে।
- দুপুরবেলা কাজের ফাঁকে আমরা বেলের শরবত পান করতে পারি। দুপুরবেলা সূর্যের অতিরিক্ত তাপে যখন আমাদের শরীর গরম হয়ে যায়, তখন চাইলে আমরা এই বেলের শরবত পান করতে পারি। যার ফলে আমাদের শরীরের গরম ভাব কেটে যায় এবং শরীরে কাজের এনার্জি যোগায়।
- প্রতিদিনের জীবনে আমাদের যখন মনে হবে আমরা খুব ক্লান্তিতে ভুগছি, তখন চাইলে এক গ্লাস বেলের শরবত খাওয়া যেতে পারে। কারণ বেলের শরবতে থাকা বিভিন্ন ধরনের উপাদান ক্লান্তি দূর করে শরীরে এনার্জি যোগায়।
- গরমকালে দুপুর এবং রাতে আমরা বেলে শরবত খেতে পারি। কারণ এই সময় বেলের শরবত খেলে আমাদের শরীর ঠান্ডা থাকে এবং শরীর হতে বিভিন্ন রোগ দূর হয়ে যায়।
- শীতকালে আমাদের অতিরিক্ত পরিমাণে বেল না খাওয়াই ভালো। কারণ শীতকালে অনেক ঠান্ডা থাকে। আর অন্যদিকে বেল হল ঠান্ডা ফল। তাই শীতকালে বেল খাওয়া থেকে বিরত থাকা ভালো।
খালি পেটে বেল খাওয়ার উপকারিতা
- প্রতিদিন খালি পেটে বেলের শরবত পান করলে আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
- আমাদের ত্বকের ব্রণ দূর করতে এবং ত্বক ভালো রাখতে খালি পেটে বেল খাওয়ার গুরুত্ব অপরিসীম।
- বেলের শাসে অনেক বেশি পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা আমাদের দেহের আলসার দূর করতে সাহায্য করে।
- প্রতিদিন খালি পেটে বেল খেলে আমাদের ডায়াবেটিস দূর হয়ে যায়।
- শরীরে থাকা বিভিন্ন ধরনের বাত ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে বেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- বেল আমাদের শরীরে পুষ্টি গুনাগুন বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে আমাদের শরীর বিভিন্ন রোগ জীবাণু থেকে বেঁচে থাকে।
- সকালে খালি পেটে বেল খেলে আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- ক্যান্সার দূর করতে সকালে খালি পেটে তেল খাওয়ার গুরুত্ব অপরিসীম।
কাঁচা বেলের উপকারিতা
- প্রথমে আমাদের কাঁচা বেল কেটে রোদে শুকাতে হবে।
- পরিপূর্ণ শুকনো হয়ে গেলে তা পিষে গুঁড়ো করে নিতে হবে।
- বেলের গুড়ার সাথে এক চামচ ব্রাউন সুগার যোগ করতে হবে।
- এরপর গরম পানির সাথে মেশাতে হবে।
- এভাবে খেলে আমাদের ডায়রিয়া নির্মূল হয়ে যাবে।
পাকা বেল খাওয়ার নিয়ম
- পাকা বেল আমরা এমনিতেই খেতে পারি। শুধু পাকা বেল খেলেও তা আমাদের শরীরের জন্য উপকার সাধন করবে।
- পাকা বেল আমরা শরবত করে খেতে পারি। বেলের শরবত আমাদের শরীরে অনেক ভালো কাজ করে।
- পাকা বেল আমরা সেদ্ধ করে খেতে পারি। এভাবে খেলে আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ডায়রিয়া দূর হয়।
- আমরা পাকা বেল চাটনি করে রাখতে পারি। এভাবে খেলেও তা আমাদের শরীরের জন্য উপকারী হবে।
পাকা বেল খাওয়ার অপকারিতা
- বেল অনেক মিষ্টি জাতীয় একটি ফল। তাই যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তারা অতিরিক্ত পরিমাণে বেল খেলে শরীরের সুগারের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যার কারণে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে।
- অতিরিক্ত বেল খেলে যৌন শক্তি কমে যায়।
- যেহেতু বেল একটি ঠান্ডা ফল, তাই এটি ওদের পরিমাণে খেলে ঠান্ডা জনিত বিভিন্ন সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- অনেক সময় বেল অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- কাঁচা বেল খাওয়ার ফলে আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
বেলের শরবত খাওয়ার নিয়ম
- বেল – ১টি
- চিনি অথবা গুড় – স্বাদ অনুযায়ী
- দুধ – এক কাপের মতো
- কাজুবাদাম – ৪-৫ টি
- কিসমিস – ৮-১০ টি
- লবণ – ২ চা চামচ
- প্রথমে আমাদের বেলটি ধুয়ে নিতে হবে।
- বাইরের শক্ত খোসা ছাড়িয়ে ফেলতে হবে।
- ভেতরে বেলের যে মন্ডটা থাকবে তা একটি বাটিতে নিতে হবে।
- বেলে থাকা বীজগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে।
- উক্ত মন্ডের সাথে পানি যোগ করে ৫-১০ রেখে দিতে হবে।
- এরপর উক্ত উপকরণ গুলো মন্ডের সাথে যোগ করে শরবত তৈরি করতে হবে।
- বেলের শরবত আমরা সকালে খালি পেটে পান করতে পারি।
- শরীরে অতিরিক্ত গরম লাগলে সে সময় আমরা বেলের শরবত পান করতে পারি।
- কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিলে আমরা বেলে শরবত পান করতে পারি।
- রাতে ঘুমানোর আগে আমরা বেলের শরবত পান করতে পারি।
- উচ্চ রক্তচাপের সময় বেলের শরবত পান করলে উচ্চ রক্তচাপ কমে যায়।
বেলের উপকারিতা
- প্রথমত বেল আমাদের শরীরের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
- আমাদের ডায়রিয়ার সমস্যা দূর করতে বেল অনেক উপকারী একটি ফল।
- আমাদের শরীরে থাকা আলসার উপশমে বেলের গুরুত্ব অপরিসীম।
- ডায়াবেটিস কমাতে বেল অনেক সাহায্য করে।
- অনেক সময় বিভিন্ন কারণে আমাদের যক্ষা হয়ে থাকে। এই সমস্যা দূর করতেও বেল ব্যাপক ভূমিকা রাখে।
- বিভিন্ন ধরনের বাত ব্যথা উপশমে বেল অনেক কার্যকরী ফল।
- আমাদের দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে বেল ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।
- বেল আমাদের শরীরে থাকা ক্যান্সারের মতো অসুখ দূর করতে সাহায্য করে।
- রক্ত পরিশুদ্ধ করতে বেল অনেক কাজে দেয়।
- বেলে বিটা ক্যারোটিন থাকে। যা আমাদের লিভারকে ভালো রাখতে সাহায্য করে।
- উচ্চ রক্তচাপ কমাতে গেলে ভূমিকা অপরিসীম।
- আমাশয় দূর করতে বেল অনেক উপকারী একটি ফল।
- শুক্রাণু ঘন করতে বেলের গুরুত্ব অপরিসীম।
- আমাদের ত্বক ভালো রাখতে বেল কার্যকরী ফল।
বেলের অপকারিতা
- অতিরিক্ত পরিমাণে বেল খেলে ডায়াবেটিসের পরিমাণ বেড়ে যায়।
- যৌন শক্তি কমে যায়।
- ঠান্ডা জনিত বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।
- ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- কাঁচা বেল খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।