প্রিয় পাঠকবৃন্দ, আজকে আমাদের পোস্ট এর বিষয় হলো এলোভেরা সম্পর্কে। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা জানতে চান খালি পেটে এলোভেরা খেলে কি হয়, অ্যালোভেরা খাওয়ার নিয়ম, খালি পেটে এলোভেরা খেলে কি হয়, অ্যালোভেরা জুস তৈরির নিয়ম ইত্যাদি সম্পর্কে। আজকে আমরা এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবো।

তাহলে চলুন জেনে নেই এলোভেরা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে।

খালি পেটে এলোভেরা খেলে কি হয় তা সম্পর্কে জানার আগে আমাদের কোন ধরনের উপকার হয় তা জানার আগে আমাদের জানা উচিত এলোভেরা কোন কোন পদ্ধতিতে খাওয়া দরকার। এখন আমরা এ বিষয়েই আলোচনা করবো। এলোভেরা প্রাকৃতিক গুনাগুন সমৃদ্ধ এক ধরনের ঔষধি গাছ।

এটি আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের উপকার সাধন করে থাকে। বিভিন্ন ধরনের রোগজীবানুর হাত থেকে রক্ষা করে আমাদের শরীরকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। এলোভেরাতে বিভিন্ন ধরনের উপাদান থাকে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ

• ম্যাগনেসিয়াম (Mg)
• ক্রোমিয়াম (Cr)
• ক্যালসিয়াম (Ca)
• জিংক (Zn)
• পটাশিয়াম (k)
• কপার (Cu)
• ম্যাঙ্গানিজ (Mn) ইত্যাদি।

উপরোক্ত উপাদানগুলো এলোভেরার মধ্যে লক্ষ করা যায়। এই উপাদান গুলো আমাদের শরীরে নানা ধরনের কার্যসাধন করে থাকে। আমাদের শরীরকে সুস্থ ও সুন্দর রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া এলোভেরায় বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন লক্ষ করা যায়। ভিটামিনসমুহ নিম্নরুপঃ

• ভিটামিন এ
• ভিটামিন সি
• ভিটামিন ই
• ভিটামিন বি-১
• ভিটামিন বি-২
• ভিটামিন বি-৩
• ভিটামিন বি-৬
• ভিটামিন বি-১২

উপরোক্ত ভিটামিন এবং উপাদানগুলো ছাড়াও এলোভেরার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের অত্যাবশ্যকীয় এমাইনো এসিড বিদ্যমান থাকে। প্রায় ১৮-২০ ধরনের এমাইনো এসিড বিদ্যমান থাকে এই এলোভেরার মধ্যে। এছাড়া বিভিন্ন এন্টি-অক্সিডেন্ট এর মধ্যে ফ্যাটি এসিড, ফলিক ও কোলিন এসিড এবং অন্যান্য এন্টি-অক্সিডেন্ট বিদ্যমান থাকে। এলোভেরা বিভিন্ন উপায়ে খাওয়া যায়। এখন আমরা জানবো কি কি ভাবে এলোভেরা খাওয়া যায়।

• জুস বা সালাদ আকারে আমরা এলোভেরা খেতে পারি।
• সকালে ঘুম থেকে খালি পেটে আমরা এলোভেরার জুস খেতে পারি। যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
• আমরা প্রতিবেলার খাবারের সাথে সালাদ করে এলোভেরা খেতে পারি।
• শরবতের সাথে মিশিয়েও আমরা এই এলোভেরা খেতে পারি।

আমরা আগেই জেনেছি যে, এলোভেরা হলো ঔষধি গুনাগুন সম্পন্ন এক ধরনের প্রাকৃতিক গাছ। এর মধ্যে অনেক ধরনের প্রাকৃতিক উপাদান মজুদ থাকে। এর পাশাপাশি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন থাকে যা আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এছাড়া বিভিন্ন ধরনের কার্যকরী এন্টি-অক্সিডেন্ট এবং এসিড থাকে। এই উপাদান সমূহ আমাদের দেহের বিভিন্ন উপকার সাধন করে থাকে। এখন আমরা জানবো এলোভেরা খেলে আমাদের কি কি উপকার হয়। চলুন জেনে নেই তা সম্পর্কে। উপকারিতাসমুহ নিম্নরুপঃ

• এলোভেরার মধ্যে এক ধরনের উপাদান থাকে, যার নাম হলো ল্যাক্টেটিভ। এই উপাদান আমাদের পেটে থাকা ক্ষতিকারক বর্জ্য বাইরে বের করে পেট পরিস্কার রাখতে সাহায্য করে।
• আমাদের হজমশক্তি বাড়াতে এলোভেরা অনেক বেশি কাজে দেয়।
• আমাদের দেহের ক্লান্তি দূর করতে এলোভেরার জুস অনেক উপকারী।
• রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখতে সাহায্য করে।
• রক্তে সুগার ও কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখতে সাহায্য করে।
• আমাদের শরীর থেকে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকারক বর্জ্য পদার্থ মল্মুত্রের মাধ্যমে বাইরে বের করতে সাহায্য করে।
• আমাদের চুলকানি ও বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে।
• আমাদের শরীরকে ডিহাইড্রেশন এর হাত থেকে মুক্ত রাখতে সাহায্য করে।
• পাচনতন্ত্রের কাজ সঠিক রাখতে এলোভেরা অনেক উপকারী।
• আমাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে বাইরের জীবানু আমাদের শরীরকে আক্রমন করতে পারে না।
• আমাদের শরীরে থাকা অতিরিক্ত মেদ এবং ওজন কমাতে এলোভেরা অনেক উপকারী।
• এলোভেরা আমাদের দেহের মাংসপেশী শক্ত ও মজবুত করতে সাহায্য করে।
• হাড়ের গঠন ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
• আমাদের হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে।

খালি পেটে এলোভেরা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। এলোভেরাতে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, মিনারেল, বিভিন্ন ধরনের এসিড এবং এন্টি-অক্সিডেন্ট বিদ্যমান থাকে। যা আমাদের দেহকে বিভিন্ন রোগজীবানুর হাত থেকে রক্ষ করে দেহকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া দেহের অভ্যন্তরে তৈরি হওয়া বিভিন্ন ধরনের অসুখ দূর করতে সাহায্য করে। এখন আমরা খালি পেটে এলোভেরা খেলে কি হয় তা সম্পর্কে জানবো। চলুন জেনে নেই তা সম্পর্কে।

• খালি পেটে এলোভেরার শরবত খেলে আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হয়ে যায়।
• আমাদের হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়।
• অনেক সময় আমাদের শরীর বিভিন্ন কারনে ডিহাড্রেটেড হয়ে পড়ে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এলোভেরার জুস খেলে আমাদের শরীর ডিহাইড্রেশন এর হাত থেকে মুক্তি পায়।
• ইলেক্ট্রোলাইট সাম্যবস্থায় রেখে আমাদের শরীর থেকে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর পদার্থ বাইরে বের করতে সাহায্য করে।
• এলোভেরাতে অনেক বেশি পরিমানে ভিটামিন, মিনারেল এবং বিভিন্ন এন্টি-অক্সিডেন্ট থাকে। যা আমাদের দেহকে বিভিন্ন অসুখ এর হাত থেকে রক্ষ করে।
• সকালে নিয়মিত খালি পেটে এলোভেরা খেলে আমাদের অপুষ্টিজনিত সমস্যা দূর হয়ে যায়।
• বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এবং এন্টি-অক্সিডেন্ট আমাদের ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে।
• চুল ভালো রাখতে আমরা এলোভেরা ব্যবহার করতে পারি।
• খালি পেটে এলোভেরার রস খেলে আমাদের হাড় ও পেশি মজবুত হয়।
• ওজন কমাতে চাইলে আমরা খালি পেটে এলোভেরার জুস খেতে পারি।
• আমাদের দাত ভালো রাখতে আমরা এই এলোভেরার রস খেতে পারি।
• আমাদের ডায়াবেটিস দূর করতে আমরা এই এলোভেরার রস খেতে পারি।

পূর্বে আমরা খালি পেটে এলোভেরা খেলে কি হয়, অ্যালোভেরা খাওয়ার নিয়ম, খালি পেটে এলোভেরা খেলে কি হয় ইত্যাদি সম্পর্কে জেনেছি। এখন আমরা এলোভেরার জুস কিভাবে তৈরি করতে হয় তা সম্পর্কে জানবো। চলুন জেনে নেই কিভাবে এলোভেরা জুস ঘরোয়া পদ্ধতিতে বাড়িতে বানানো যায়। এলোভেরা জুস বাড়িতে বানানোর জন্য কিছু উপকরন দরকার।

• এলোভেরার নির্যাস
• এক গ্লাস পরিমান পানি
• ১-২ চা চামচ মধু
• ১ চা চামচ লেবুর রস

• প্রথমে আমাদের এলোভেরার পাতা ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।
• এবার তার থেকে জেল বের করে নিতে হবে।
• জেল বের করা হয়ে গেলে তা আলাদা বাটিতে রাখতে হবে।
• ১-২ ঘন্টার মত ফ্রিজে রেখে দিতে হবে।
• জেল যখন ঠান্ডা হয়ে যাবে তখন তার মধ্যে জেল, মধু এবং বিভিন্ন ফলের রস দিয়ে ব্লেন্ড করে নিতে হবে।
• এবার লেবুর রস দিয়ে দিতে হবে।
• জুস এইভাবে অনেক সময় ধরে রাখা যাবে না। খেয়ে ফেলতে হবে।

একটু আগে আমরা খালি পেটে এলোভেরা খেলে কি হয়, অ্যালোভেরা খাওয়ার নিয়ম, খালি পেটে এলোভেরা খেলে কি হয়, অ্যালোভেরা জুস তৈরির নিয়ম ইত্যাদি সম্পর্কে জেনেছি। এখন আমরা এলোভেরা জুস খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানবো।

বিভিন্ন সময় রয়েছে যখন আমাদের এলোভেরা জুস খাওয়ার সঠিক সময় হিসেবে বিবেচিত। যেমন সকালে এবং রাতে আমরা এলোভেরা জুস খেতে পারি। আবার অনেক বেশি পরিমানে এই এলোভেরা জেল খাওয়া উচিত নয়। এখন আমরা এলোভেরা জুস খাওয়ার সঠিক সময় নিয়ে আলোচনা করবো।

• আমাদের প্রতিদিনের খাবার খাওয়ার ঠিক ২০-৩০ মিনিট পূর্বে আমরা ১ চা চামচ এলোভেরা জেল নিয়ে ঠান্ডা পানির সাথে মিশিয়ে খেতে পারি।
• অনেকসময় এলোভেরার স্বাদ আমাদের ভালো লাগে না। এই কারনে আমরা বিভিন্ন ফলের রসের সাথে জুস করে খেতে পারি।
• প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ১-২ চা চামচ এলোভেরা জেল নিয়ে হালকা কুসুম গরম পানির সাথে মিশিয়ে খেলে আমরা অনেক উপকার পাবো।
• এলোভেরার সাথে মধু মিশিয়ে খেলে আমাদের দেহের অতিরিক্ত ওজন কমে যায়।
• এলোভেরার জুস এর সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়া যায়।

আমরা আগেই জেনেছি যে এলোভেরাতে অনেক বেশি পরিমানে এন্টি-অক্সিডেন্ট থাকে যা আমাদের দেহের অতিরিক্ত বর্জ্য পদার্থ দেহের বাইরে বের করে দিতে সাহায্য করে। এছাড়া আমাদের ত্বক সুন্দর রাখতেও এই এলোভেরা জেল অনেক কার্যকরী।

আলোভেরা জেল আমাদের মুখে মাখলে আমাদের ত্বক উজ্জ্বল, নরম এবং সুন্দর হয়ে ওঠে। বিভিন্ন ভাবে আমরা এই আলোভেরা জেল আমাদের মুখে দিতে পারি। এখন আমরা জানবো এলোভেরা আমাদের মুখে মাখলে কি হয়।

• আমাদের অনেক সময় বিভিন্ন কারনে রোদ বা গরমে ত্বক পুড়ে যায়। যাকে রোদে পোড়া বলা হয়। ত্বক রোদে পুড়লে আমরা এলোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারি। এলোভেরা জেল আমাদের ত্বকে নতুন কোষ তৈরি করতে সাহায্য করে। আবার যখন আমরা রোদের মধ্যে বাইরে যাই তখন আমাদের এলোভেরা জেল হালকা মুখে মেখে বাইরে যাওয়া উচিত।
• আমাদের ত্বকে বিভিন্ন কারনে অনেক সময় বয়সের ছাপ পড়ে যায়। বিভিন্ন ধরনের চিন্তা, কাজ, রোদে ঘুরাঘুরি ইত্যাদির কারনে আমাদের ত্বক খুব অল্প বয়সে দেখতে বুড়িয়ে যাওয়ার মত লাগে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আমরা এলোভেরার জেল ব্যবহার করতে পারি। এক্ষেত্রে এলোভেরা জেল মুখে মেখে কিছু সময় থাকতে হবে এবং পরবর্তীতে ধুয়ে ফেলতে হবে।
• আমাদের ঠোট উজ্জ্বল এবং প্রানোবন্ত রাখতে আমরা এলোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারি। সেক্ষেত্রে আমাদের ঠোটে কিছুক্ষন এলোভেরা জেল এবং কফির মিশ্রন এর সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করতে হবে। এলোভেরা জেল আমাদের ঠোট মসৃণ রাখতেও সাহায্য করে।

 

এলোভেরা আমরা বিভিন্ন উপায়ে ব্যবহার করতে পারি। যেভাবেই ব্যবহার করি না কেন আমাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যবহার করা উচিত নয়। আমরা এলোভেরা জেল নিম্নোক্ত উপায়ে ব্যবহার করতে পারি। উপায়সমুহ নিম্নরুপঃ

• মধুর সাথে এলোভেরার জেল মিশিয়ে আমরা ত্বকে ব্যবহার করতে পারি।
• গোলাপ এর সাথে এলোভেরা মিশিয়ে টোনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারি।
• আমাদের ত্বকে অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ দেখা দেয়। যেমন- বিভিন্ন ধরনের এলারজি, র‍্যাশ, চুলকানি ইত্যাদি দেখা দেয়। তখন চাইলে আমরা এই এলোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারি। কারন এলোভেরা জেল প্রদাহনাশক হিসেবে কাজ করে।
• আমাদের ত্বকের ছোপ ছোপ দাগ দূর করতে আমরা এলোভেরা জেল এর সাথে লেবুর রস মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারি।
• ত্বক উজ্জ্বল ও প্রানোবন্ত করতে আমরা এলোভেরার সাথে হলুদ মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারি।
• টক দই এর সাথে এলোভেরা মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারি।
• নারিকেল তেল এর সাথে মিশিয়ে এলোভেরা ব্যবহার করলে আমাদের ত্বক সুন্দর হয়ে ওঠে।

রাতে এলোভেরা ব্যবহার এর ক্ষেত্রে আমরা ফেস মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করতে পারি। এই মাস্ক তৈরি করতে নিম্নের ধাপগুলো অনুসরন করতে হবে।

• এলোভেরা জেল – ২-৩ চা চামচ
• নারিকেল তেল – ১-২ চা চামচ
• টক দই – ২-৩ চা চামচ

উক্ত উপাদানগুলো দিয়ে আমরা এক ধরনের মিশ্রন তৈরি করতে পারি। এই মিশ্রন আমরা আমাদের চুল, ত্বক এবং শরীরে ব্যবহার করতে পারি।

আজকের পোস্ট থেকে আমরা খালি পেটে এলোভেরা খেলে কি হয়, অ্যালোভেরা খাওয়ার নিয়ম, খালি পেটে এলোভেরা খেলে কি হয়, অ্যালোভেরা জুস তৈরির নিয়ম ইত্যাদি সম্পর্কে জেনেছি। আশা করি আজকের পোস্ট থেকে আপনি আপনার মূল্যবান তথ্য পেয়েছেন।

আমরা এই ধরনের মূল্যবান তথ্যসমৃদ্ধ পোস্ট প্রতিনিয়ত আপনাদের উদ্দ্যেশ্যে প্রকাশ করে থাকি। যদি আমাদের পোস্ট আপনার কাজে আসে তবে আমাদের পেজ ফলোও করুন এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।