দাঁতের সুরক্ষার জন্য করণীয় ১০টি দিক
দাঁতের সুরক্ষার জন্য করণীয় ১০টি দিক
দাঁতের সুরক্ষার জন্য করণীয় ১০টি দিক দাঁত আমাদের শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ, যার মাধ্যমে আমরা খাদ্য চিবিয়ে হজম প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপটি শুরু করি। দাঁতের সঠিক যত্ন না নিলে দাঁতের ক্ষয়, দাঁতের সংক্রমণ, ব্যথা এবং আরও নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য কিছু নিয়মিত অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। নিচে দাঁত সুরক্ষার জন্য ১০টি করণীয় দিক নিয়ে আলোচনা করা হলো।
১. নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করা

দাঁতের যত্নের সবচেয়ে মৌলিক ধাপ হলো নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করা। প্রতিদিন অন্তত দুইবার, বিশেষত সকালে এবং রাতে ঘুমানোর আগে ব্রাশ করা প্রয়োজন। ব্রাশ করার সময় কমপক্ষে ২ মিনিট সময় নেওয়া উচিত এবং ব্রাশের গতি হওয়া উচিত মৃদু। শক্ত করে ব্রাশ করলে মাড়ির ক্ষতি হতে পারে। ফ্লুরাইডযুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করা ভালো, কারণ ফ্লুরাইড দাঁতের এনামেল মজবুত করে এবং দাঁতের ক্ষয় রোধ করে।
২. দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা খাবার পরিষ্কার করা (ফ্লস করা)
ব্রাশ করার সময় দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা ক্ষুদ্র খাবার কণা সব সময় পরিষ্কার হয় না। এজন্য নিয়মিত ফ্লস ব্যবহার করা জরুরি। ফ্লস দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাদ্যকণা এবং প্লাক সরিয়ে মাড়িকে সুস্থ রাখে। মাড়ির প্রদাহ ও সংক্রমণ এড়াতে দিনে অন্তত একবার ফ্লস করা উচিত।
৩. সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে

চলাদাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সঠিক খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকা অনেক বড়। চিনিযুক্ত এবং উচ্চ-অ্যাসিডযুক্ত খাবার যেমন সফট ড্রিংকস, মিষ্টি, ক্যান্ডি ইত্যাদি দাঁতের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এ ধরনের খাবার থেকে দাঁতের ক্ষয় হতে পারে এবং ক্যাভিটি তৈরি হতে পারে। তাই এসব খাবার পরিমিতভাবে খাওয়া উচিত। প্রচুর পরিমাণে ফল, সবজি, দুধ এবং পানীয় গ্রহণ করলে দাঁত মজবুত থাকে।
৪. ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য বর্জন
ধূমপান বা তামাকজাত দ্রব্য দাঁতের উপর নানাভাবে প্রভাব ফেলে। এটি শুধু দাঁতের রং নষ্ট করে না, বরং দাঁতের মাড়ির রোগ সৃষ্টি করে, এমনকি মুখের ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়ায়। তাই দাঁতের সুরক্ষার জন্য ধূমপান এবং তামাকজাত দ্রব্য সম্পূর্ণভাবে বর্জন করা উচিত।
৫. পর্যাপ্ত পানি পান করা
পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা দাঁতের সুরক্ষার একটি সহজ উপায়। পানি মুখের লালা উৎপাদন বাড়ায়, যা খাদ্যকণা ও ব্যাকটেরিয়া ধুয়ে ফেলে। খাবারের পর পানি পান করলে দাঁতের উপর জমে থাকা খাদ্যকণা এবং অ্যাসিড দূর হয়, যা দাঁতের ক্ষয় রোধ করতে সহায়ক।
৬. চিউইং গাম চিবানো
চিনি ছাড়া চিউইং গাম চিবানো দাঁতের জন্য ভালো হতে পারে। এটি মুখে লালার পরিমাণ বাড়ায়, যা দাঁতের প্লাক দূর করে এবং দাঁতের এনামেল মজবুত রাখতে সাহায্য করে। তবে অবশ্যই এটি চিনি ছাড়া হতে হবে, কারণ চিনি দাঁতের জন্য ক্ষতিকর।
৭. নিয়মিত দাঁতের ডাক্তার দেখানো

অনেকেই দাঁতের কোনো সমস্যা না হলে ডাক্তার দেখান না। কিন্তু দাঁতের যেকোনো সমস্যার আগেই সমাধান করা গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি ছয় মাস অন্তর একজন দাঁতের ডাক্তার দেখানো উচিত, যাতে দাঁতের অবস্থা নিয়মিত পর্যবেক্ষণে থাকে এবং কোনো সমস্যা দেখা দিলে প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা যায়।
৮. দাঁতের প্রোটেকটিভ গার্ড ব্যবহার করা
যারা খেলাধুলায় নিয়মিত অংশ নেন, বিশেষ করে ফুটবল, বক্সিং, হকি বা রাগবির মতো খেলায়, তাদের দাঁতের সুরক্ষার জন্য প্রোটেকটিভ গার্ড ব্যবহার করা উচিত। এ ধরনের খেলায় আঘাতের ঝুঁকি বেশি, যা দাঁত ভেঙে বা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। দাঁতের গার্ড ব্যবহার করলে এই ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।
৯. দাঁতের সঠিক ব্রাশ এবং পেস্ট নির্বাচন করা
দাঁতের সুরক্ষার জন্য সঠিক টুথব্রাশ এবং টুথপেস্ট নির্বাচন করা জরুরি। খুব শক্ত ব্রাশ ব্যবহার করলে মাড়ি এবং দাঁতের এনামেল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। একটি নরম ব্রিস্টল যুক্ত ব্রাশ ব্যবহার করা উচিত এবং প্রতি তিন মাস অন্তর ব্রাশ পরিবর্তন করতে হবে। ফ্লুরাইডযুক্ত টুথপেস্ট দাঁতের ক্ষয় রোধে কার্যকর, তাই এ ধরনের টুথপেস্ট ব্যবহার করা উচিত।
আরও জানুন-ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় টিপস ও কৌশল এবং নিরাপত্তা: সতর্কতা ও প্রস্তুতি
১০. দাঁতের গ্যাজেট ব্যবহার থেকে সতর্ক থাকা
বর্তমানে দাঁতের সুরক্ষায় বিভিন্ন ইলেকট্রিক ব্রাশ, ওয়াটার ফ্লসার এবং অন্যান্য গ্যাজেট ব্যবহার করা হয়। তবে এসব গ্যাজেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। সঠিক নির্দেশনা না মেনে ব্যবহার করলে দাঁতের ক্ষতি হতে পারে। তাই যেকোনো দাঁতের গ্যাজেট ব্যবহারের আগে দাঁতের ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
দাঁতের সুরক্ষা আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য রক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করা, ফ্লস করা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা এবং নিয়মিত দাঁতের ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া যেমন প্রয়োজন, তেমনি দাঁতের ক্ষতির কারণগুলিও এড়িয়ে চলা জরুরি। দাঁতের যত্নে এই অভ্যাসগুলো মেনে চললে দাঁত সুস্থ থাকবে এবং দীর্ঘমেয়াদে দাঁতের সমস্যাগুলো থেকে মুক্ত থাকা যাবে।