আইফোনের ব্যাটারি রিপ্লেসমেন্ট: কেন এবং কখন প্রয়োজন?
আমাদের আজকের আর্টিকেল আইফোনের ব্যাটারি রিপ্লেসমেন্ট: কেন এবং কখন প্রয়োজন? যাদের আইফোন আছে তাদের জন্য এই আর্টিকেল টি অনেক জরুরী। সবাই মনোযোগ দিয়ে পড়বেন এবং শেয়ার করে দিবেন অন্যদের জন্য।
অন্য সব রিচার্জেবল ব্যাটারির ডিভাইসের মত, আইফোনের ব্যাটারির জীবনকালও সীমিত। সময়ের সাথে সাথে আইফোনের ব্যাটারি ডিগ্রেড হয়ে যায়, যার ফলে ব্যাটারি ব্যাকআপ এবং পারফরম্যান্স, উভয়ই কমে আসে। এই পোস্টে আমরা আইফোনের ব্যাটারি রিপ্লেসমেন্ট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
আইফোনের ব্যাটারি হেলথ কি?
ব্যাটারি রিপ্লেসমেন্ট সম্পর্কে জানার আগে চলুন বোঝার চেষ্টা করি আইফোনের ব্যাটারি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য।
ব্যাটারি লাইফস্প্যান
সকল লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির মত, আইফোনের ব্যাটারির জীবনকালও সীমিত। অ্যাপল তাদের আইফোনের ব্যাটারিকে এমনভাবে ডিজাইন করেছে যাতে ৫০০ কমপ্লিট চার্জ সাইকেল-এর পরেও ব্যাটারি তার অরিজিনাল ক্যাপাসিটির ৮০% ধরে রাখতে পারে। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ডিভাইসগুলোর ক্ষেত্রে ১০০০ কমপ্লিট চার্জ সাইকেল-এর পরে ৮০% ক্যাপাসিটি ধরে রাখার দাবি করেছে অ্যাপল। এর মানে হলো, যতবার ফোনকে চার্জ করা হবে, তার ব্যাটারি লাইফ তত কমে আসবে।
ব্যাটারি হেলথ কিভাবে দেখবেন
আইওএস-এ ব্যাটারি হেলথ চেক করার জন্য যথেষ্ট তথ্য প্রদান করে অ্যাপল, যা থেকে আইফোনের ব্যাটারির অবস্থা সম্পর্কে ভালো ধারণা পাওয়া যায়। Settings > Battery > Battery Health এ প্রবেশ করে আইফোনের ব্যাটারি হেলথ চেক করা যাবে। ব্যাটারি হেলথ পেজে কিছু তথ্য দেখতে পাবেন, সেগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক:
Maximum Capacity: এর মানে হলো নতুন ব্যাটারির তুলনায় উক্ত ফোনের ব্যাটারি ক্যাপাসিটি কতটুকু বাকি রয়েছে।
Peak Performance Capability: এর মানে হলো এই ব্যাটারি এখনো সর্বোচ্চ পারফরম্যান্স প্রদান করতে পারবে কিনা। আইফোনের ব্যাটারি অতিরিক্ত ডিগ্রেড হয়ে গেলে এই বিষয়ে মেসেজ দেখতে পাবেন।
যেসব ক্ষেত্রে ব্যাটারি পরিবর্তন করা জরুরি
এবার জানি কোন কোন ক্ষেত্রে আইফোনের ব্যাটারি পরিবর্তনের কথা ভেবে দেখা উচিত।
ব্যাটারি লাইফ মাত্রাতিরিক্তভাবে কমে যাওয়া
আইফোনের ব্যাটারি পরিবর্তনের সময় হয়েছে তা বোঝার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো ব্যাটারি লাইফ কমে আসা। আপনার আইফোন যদি সারাদিন ব্যবহার করার মত যথেষ্ট ব্যাটারি ব্যাকআপও প্রদান না করে, সেক্ষেত্রে ব্যাটারি রিপ্লেসমেন্টের প্রয়োজন পড়তে পারে।
অনাকাঙ্ক্ষিত শাটডাউন
আপনার আইফোন যদি হঠাৎ হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়া বা ব্যাটারি লো হওয়া ছাড়াই বন্ধ হয়ে যায়, তবে বুঝে নিন ফোনের ব্যাটারির অবস্থা ভালো নয়। এই সমস্যা হয়ে থাকে প্রসেসরের সর্বোচ্চ পারফরম্যান্স প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় পাওয়ার সরবরাহে ব্যাটারি ব্যর্থ হলে।
পারফরম্যান্স ইস্যু
অনাকাঙ্ক্ষিত শাটডাউন রোধ করতে মাঝেমধ্যে পুরোনো আইফোনের পারফরম্যান্স কিছুটা কমিয়ে দিতেও দেখা গেছে অ্যাপলকে। যদি আপনার ফোন স্লো বা আনরেস্পন্সিভ মনে হয় এবং অন্য সকল কারণ ভুল প্রমাণিত হয়, সেক্ষেত্রে ব্যাটারি রিপ্লেসমেন্টের কথা ভেবে দেখতে পারেন।
ব্যাটারি হেলথ ওয়ার্নিং
আইফোন ব্যাটারি হেলথ সেটিংস এর মাধ্যমে কিভাবে ব্যাটারি হেলথ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় সে সম্পর্কে তো ইতিমধ্যে জানতে পেরেছেন। ব্যাটারি হেলথ সেকশনে যদি দেখতে পান আপনার ব্যাটারি উল্লেখযোগ্য হারে ডিগ্রেড হয়েছে বলা আছে, তাহলে আইফোনের ব্যাটারি রিপ্লেস করার প্রয়োজন পড়তে পারে। এই মেসেজের মানে হলো ব্যাটারির কার্যক্ষমতা অতিরিক্ত হ্রাস পেয়েছে।
কখন আইফোনের ব্যাটারি রিপ্লেস করা উচিত
ডিভাইসের বয়স বেশি হলে
আপনার আইফোনের বয়স যদি বেশি হয়ে থাকে এবং ব্যাটারি ডিগ্রেডেশন অবস্থা বেশি শোচনীয় হলে, সেক্ষেত্রে ব্যাটারি রিপ্লেসমেন্টের প্রয়োজন পড়তে পারে। পুরোনো ফোনগুলো সাধারণত অতিরিক্ত ব্যাটারির টানাপোড়েনে পড়ে থাকে। সাধারণত ব্যাটারি হেলথ ৮০% এর কম হয়ে গেলে আইফোনের ব্যাটারি রিপ্লেস বা পরিবর্তন করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রতিনিয়ত চার্জ করতে হলে
আপনার আইফোন যদি দিনের মধ্যে একাধিকবার চার্জ এর প্রয়োজন পড়ে, তাহলে বুঝে নিন আপনার আইফোনের চার্জ ধরে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। প্রতিনিয়ত চার্জ করার ফলে ফোনের ব্যাটারি খুব দ্রুত শেষ হয়ে যায়।
ব্যাটারি ফুলে যাওয়া
খুব কম ক্ষেত্রে ভেতরের কেমিক্যাল রিয়েকশন এর জন্য আইফোনের ব্যাটারি ফুলে যেতে পারে। আপনার আইফোনের ব্যাটারি যদি ফুলে যেতে দেখেন, তবে এটি তৎক্ষণাৎ ব্যবহার বন্ধ করে প্রফেশনাল সাহায্যের দ্বারস্থ হওয়া উচিত। ফুলে যাওয়া ব্যাটারি যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।
কিভাবে আইফোনের ব্যাটারি পরিবর্তন করবেন
এবার জানি চলুন আইফোনের ব্যাটারি পরিবর্তন করতে চাইলে সেক্ষেত্রে কি কি অপশন রয়েছে।
অ্যাপল সার্ভিস সেন্টার
আইফোনের ব্যাটারি রিপ্লেস করার সবচেয়ে ভরসাযোগ্য উপায় হলো অ্যাপল স্টোর বা অথোরাইজড সার্ভিস প্রোভাইডার। অ্যাপল আসল পার্টস ব্যবহার করে এবং রিপ্লেসমেন্টের ক্ষেত্রে ওয়ারেন্টিও প্রদান করে থাকে। অ্যাপল সাপোর্ট অ্যাপ এর মাধ্যমে ব্যাটারি রিপ্লেসমেন্ট সার্ভিস প্রদান করে থাকে। তবে বাংলাদেশে অফিসিয়ালি অ্যাপলের রিপেয়ার সার্ভিস নেই।
থার্ড-পার্টি রিপেয়ার শপ
আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ আইফোন ব্যাটারি রিপ্লেসমেন্টের ক্ষেত্রে থার্ড-পার্টি রিপেয়ার শপ এর উপর নির্ভর করে থাকে। অ্যাপলের কাছ থেকে ব্যাটারি রিপ্লেস করিয়ে নেওয়ার চেয়ে এই উপায়ে উল্লেখযোগ্য হারে খরচ কম পড়ে থাকে। তবে খরচের দিকে না তাকিয়ে বরং বিশ্বাসযোগ্য কোনো উৎস থেকে আইফোনের ব্যাটারি পরিবর্তন করা উচিত।
ব্যাটারি হেলথ মেইনটেইন করার উপায়
আইফোনের ব্যাটারি পরিবর্তন করেও কোনো বিশেষ লাভ হবে না যদি আপনি আপনার ফোনের যথেষ্ট যত্ন না করেন।
চার্জিং হ্যাবিট অপটিমাইজ করা
আইফোনের ব্যাটারি লাইফ বাড়াতে চাইলে ফোন চার্জ করার আগে ফোনের ব্যাটারি সম্পূর্ণ শেষ করা এড়িয়ে চলুন। সবসময় ফোনের চার্জ ২০% থেকে ৮০% এর মধ্যে রাখার চেষ্টা করুন। অর্থাৎ ২০% এর কাছে আসলে চার্জ করুন এবং ৮০% এর অধিক চার্জ হলে চার্জ থেকে খুলে ফেলুন। এছাড়া অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম তাপমাত্রা থেকে ফোনকে দূরে রাখাও উত্তম।
অপটিমাইজড ব্যাটারি চার্জিং ব্যবহার
Optimized Battery Charging নামে একটি আইওএস ফিচার রয়েছে যা আপনার ডেইলি চার্জিং রুটিন অনুসরণ করে ব্যাটারিকে অপটিমাইজ করে থাকে। এই ফিচারটি ফোন ব্যবহারের সময় হওয়ার আগ পর্যন্ত ৮০% পর্যন্ত ফোনকে চার্জ করে থাকে। Settings > Battery > Battery Health > Optimized Battery Charging এ প্রবেশ করে সেটিংসটি চালু করতে পারবেন।
ব্যাকগ্রাউন্ড এক্টিভিটি কমানো
ব্যাকগ্রাউন্ডে চলা বিভিন্ন অ্যাপ ও এক্টিভিটি, এবং এগুলো থেকে আসা নোটিফিকেশন ব্যাটারিতে চাপ ফেলে। এর ফলে বেশ দ্রুত চার্জ হয়ে যায়। তাই ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ ও নোটিফিকেশন কমিয়ে রাখার চেষ্টা করুন।
এছাড়া স্ক্রিনের ব্রাইটনেস কমিয়ে রাখা, সম্ভব হলে মোবাইল ডাটার পরিবর্তে ওয়াইফাই ব্যবহার, ইত্যাদি পদ্ধতি অনুসরণ করে আইফোনের ব্যাটারি লাইফ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো যেতে পারে।